বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশের অন্তত ১৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। মংডু পুলিশের একটি তলাশি চৌকি আরাকান আর্মির দখল এবং পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের পর রাখাইনে ফের বিমান হামলা শুরু করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের দৈনিক দ্য ইরাবতি বলছে, বুধবার মংডু শহরের একটি তলাশি চৌকি দখলে নিয়ে মিয়ানমারের ১৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে আরাকান আর্মি। এ সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা ওই তলাশি চৌকি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র লুট করে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে ইরাবতি বলেছে, এর পরে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অন্তত তিনবার হামলা চালিয়েছে।
মংডুর এক বাসিন্দা ইরাবতিকে জানায়, সকালের দিকে দুটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বিকেলের দিকে আরও দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি হেলিকপ্টার থেকে ফের হামলা চালানো হয়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেছেন, বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা চালানোয় মাটি কেঁপে উঠেছে। বোমার আওয়াজ এত তীব্র ছিল যে, অনেকে কিছু সময়ের জন্য কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন না।
এদিকে মিয়ানমার জান্তা বলেছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তলাশি চৌকির দখল পুনরুদ্ধারে সৈন্যরা মংডুর ওই এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অভিযানে সৈন্য সংখ্যা এবং গোলাবারুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্যরা হামলা শুরু করায় গত দোসরা আগস্ট থেকে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেৎওয়া শহর, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মংডু ও এর আশপাশে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়েছে।
আরাকান আর্মির হামলার পর থেকে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের পাশাপাশি মিয়ানমারের সৈন্যরা ছয়টি স্থল ঘাঁটি থেকে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ গোলা বর্ষণ করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় মংডু এবং এর পার্শ্ববর্তী বুথিডং শহরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
এর আগে, বুধবার পালেৎওয়ার মায়েক ওয়া গ্রামের কাছে গোলাবর্ষণে মিয়ানমার জান্তার অন্তত ১০ সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আরাকান আর্মি। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেও রাখাইন রাজ্যের আন শহরে আরও কয়েকজন সৈন্যকে হত্যার দাবি করেছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠী।
রাখাইনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ির বহর আন শহরের মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আরাকান আর্মির সদস্যদের অতর্কিত হামলার মুখোমুখি হয়। এই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ি জ্বলছে।